Lighting The Way Islam

Select Language

Monday, 4 April 2016

যে গল্পটি আমাকে ধর্মত্যাগ করতে দেয়নি !

আমি যে গল্পটি নিয়ে লিখছি তা সূরা বাক্বারার প্রথম গল্প, আদতে ক্কুর’আনেরই প্রথম গল্প, আমাদের পিতা আদমকে (আঃ) নিয়ে। গল্পটি আমার জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটিই সেই গল্প যা আমাকে আল্লাহর প্রশ্নাতীত জ্ঞান ও ইসলামে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির গুরুত্ব সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়। আমাকে আমার ধর্মকে ত্যাগ করা থেকে রক্ষা করে।
[মুহাম্মাদ], যখন আপনার রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, “নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে একজন উত্তরাধিকারী সৃষ্টি করছি”, তারা বলেছিল, “আপনি সেখানে এমন কাউকে কিভাবে রাখতে পারেন যে অশান্তি ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? অথচ আমরাই তো আপনার প্রশংসাসহ তাসবিহ ও পবিত্রতা ঘোষণা করি”। কিন্তু তিনি বললেন, “তোমরা যা জানো না আমি তা অবশ্যই জানি।”
তিনি আদমকে যাবতীয় [জিনিসের] নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সেগুলো ফেরেশতাদের দেখিয়ে বললেন, “আমাকে এগুলোর নাম বল, যদি তোমরা সত্যিই [মনে কর তোমরা পারবে]।”
তারা বলল, “আপনি মহিমান্বিত! আমরা শুধু তাই জানি যা আপনি আমাদের শিখিয়েছেন। আপনিই তো মহাজ্ঞানী, মহাবিজ্ঞ।”
তারপর তিনি বললেন, “হে আদম, ওদেরকে এগুলোর নাম বলে দাও।” যখন সে তাদেরকে [জিনিসগুলোর] নাম বলল, আল্লাহ বললেন, “আমি কি বলিনি যে সমগ্র আকাশমন্ডলী ও যমিনে যা কিছু লুকানো আছি আমি তা জানি, এবং তোমরা যা ব্যক্ত কর ও গোপন রাখ তাও আমি জানি?” [ক্কুর’আন ২: ৩০-৩৩]
গল্পটির সূচনা আমাকে অস্বস্তিতে ফেলে এমন অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর বহন করে। আমাদেরকে মানুষ হিসেবে দুনিয়াতে পাঠানো হল কেন? শুধু দুর্নীতি ও ধ্বংস করার জন্য? আল্লাহ আমাদের খারাপ কাজ করার ক্ষমতাও বা কেন দিলেন? উনি কি চাইলেই আমাদেরকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারতেন না?
আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা আমাকে এসব প্রশ্ন করতে বাধ্য করেছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে পরীক্ষা করেন। একদিন আবিস্কার করলাম যে আমিও পরীক্ষিত হচ্ছি, নিজের ধর্মবিশ্বাস ও তার দৃঢ়তা নিয়ে। আমার খুবই কাছের কিছু বন্ধু সেই সময়ে নাস্তিকতার পথ বেছে নিয়েছিল, তারা আমাকে এমন সব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা শুরু করল যে ধর্মের কিছু ব্যাপারে আমার মনে সন্দেহের দানা বাঁধতে শুরু করল। আমি প্রায় বাধ্য হলাম কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে যেগুলোর উত্তর আমার জানা ছিল না, এবং আমার ধারণা ছিল ক্কুর’আনেও এর উত্তর লেখা নেই; আমি প্রায় বাধ্য হলাম নিজের ধর্মত্যাগ করতে। আমার মনে সারাক্ষণই আমার বন্ধুদের উত্থাপন করা বিতর্কিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে যেন এক প্রকার বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ লেগে থাকত। আমার সাহায্যের খুবই প্রয়োজন ছিল, এবং এই গল্পের মাধ্যমেই আল্লাহ আমাকে উপকারী জ্ঞান দিয়ে সাহায্য করেছেন।
জেফ্রি ল্যাং নামক একজন বক্তার কাছে ক্কুর’আনের এই আয়াতগুলো শুনছিলাম, হঠাৎ শুনে খুবই অবাক হলাম যে ফেরেশতারাও প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করেছিল। ফেরেশতারা পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেছিল!
“আপনি সেখানে এমন কাউকে কিভাবে রাখতে পারেন যে অশান্তি ঘটাবে ও রক্তপাত করবে?”
সেসব সত্তা যারা কিনা আলোর তৈরী, যারা সর্বদা আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলে, এমনকি তারাও সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করেছিল, এবং আমি সেই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছিলাম।
আল্লাহর দেয়া উত্তরটি আরো চমৎকার!
“তোমরা যা জানো না আমি তা অবশ্যই জানি।”
আল্লাহ কতটা নিখুঁত, তিনি জ্ঞানে আমাদের সীমাবদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন, মনে করিয়ে দিলেন আমাদের রবের তুলনায় আমরা কতটা নিকৃষ্ট, ফেরেশতারা কতটা নিকৃষ্ট। উপলব্ধি করলাম, আমার জবাব প্রয়োজন ছিল ইসলামের সত্যিকার অর্থ বোঝার জন্য, নিজের ধর্মকে ত্যাগ করার জন্য নয়। এবং এই গল্প দিয়েই আল্লাহ আমাকে পথ দেখাচ্ছিলেন।
এই শক্তিশালী উত্তরটার সাথে দেয়া হল একটি প্রমাণ। আল্লাহ ফেরেশতাদের স্মরণ করিয়ে দিলেন যে সবকিছুর জ্ঞান তাদেরকে দেয়া হয়নি, এবং প্রত্যেক কাজেরই একটা উদ্দেশ্য আছে, যেমনটি আছে আদমের (আঃ) সৃষ্টির। তাদের জ্ঞান কতটা সীমিত তা দেখাতে আল্লাহ কি করলেন?
তিনি আদমকে যাবতীয় [জিনিসের] নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সেগুলো ফেরেশতাদের দেখিয়ে বললেন, “আমাকে এগুলোর নাম বল, যদি তোমরা সত্যিই [মনে কর তোমরা পারবে]।”
ফেরেশতাদের প্রতিক্রিয়াঃ
“আপনি মহিমান্বিত! আমরা শুধু তাই জানি যা আপনি আমাদের শিখিয়েছেন। আপনিই তো মহাজ্ঞানী, মহাবিজ্ঞ।”
সুবহানাকা! “আপনি মহিমান্বিত!” তারা এতটা চমকে গেল কেন? আমি যে কারণে অবাক হয়েছি, ঠিক সেই কারণেই- আল্লাহ তাদের কাছে তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা প্রমাণ করে দিলেন। যদি আল্লাহ তোমার চাইতে বেশি জ্ঞান রাখেন, হে মানব, তবে তুমি কিভাবে তাঁর কাজের ব্যাপারে সন্দিহান হও?
“আপনি মহিমান্বিত!”
আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, অর্থাৎ যা কিছু অদৃশ্য তা সম্পর্কেও তিনি সম্পূর্ণ জ্ঞান রাখেন।
“আমি কি বলিনি যে সমগ্র আকাশমন্ডলী ও যমিনে যা কিছু লুকানো আছি আমি তা জানি?”
আল্লাহ তাদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন নিজের একটি প্রশ্ন দিয়ে। মনে হল যেন আল্লাহ সরাসরি আমাকেই প্রশ্নটি করেছেন। আল্লাহ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন, এটা বিশ্বাস করতে তো আমার কখনোই কোন সমস্যা ছিল না!
“এবং তোমরা যা ব্যক্ত কর ও গোপন রাখ তাও আমি জানি?”
ফেরেশতারা মানুষের হিংস্রতা ও দুর্নীতির মত নেতিবাচক দিকগুলো বর্ণনা করেছিল। কিন্তু তারা যা এড়িয়ে গিয়েছিল, তা হল মানুষের ভাল ও প্রশংসনীয় কাজ করার ক্ষমতা।
অশ্রুসিক্ত নয়নে আমি আমার ভুল বুঝতে পারলাম- আল্লাহ চেয়েছিলেন আমি যেন আমার বন্ধুদের পথ দেখতে সাহায্য করি, যেন তারা যা বুঝতে পারেনি তা তাদের বোঝাই। আমার তো যাকে আমি নিজের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মেনে নিয়েছি, যিনি দৃশ্যমান-অদৃশ্য সবকিছুর জ্ঞান রাখেন, সেই সত্তার ভুল ধরার কথা না, বরং নিজের বিশ্বাসের গভীরতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কথা।
এই লেখা পড়ার পর আপনার মনে হতে পারে এই আয়াতগুলো আমি প্রথমবারের মত পড়েছি বা শুনেছি। আসলে কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। আমি এই গল্পটি অনেকবার পড়েছি। কিন্তু আয়াতগুলোর অর্থের বহুমুখীতা আমাকে পুরো গল্পটিকে এক নতুন আলোয় দেখতে সাহায্য করেছে। আমি যখন ধর্মত্যাগ করার সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছিলাম, তখনই আল্লাহ এই গল্প দিয়ে আমাকে ফিরিয়ে এনেছেন।

নোটঃএই লেখায় ক্কুর’আনের আয়াতগুলোর আক্ষরিক অনুবাদ করা হয়নি, কেবল মূল ভাবটুকু প্রকাশ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts

Menu :

Old post

অনেক অবিবাহিত ভাইয়েরা মনে করেন বিয়ে মানেই সুখ-শান্তি

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু এই ব্যাপারটা সঠিক নয়। আপনি বিবাহিত বা অবিবাহিতই হোন না কেন, আপনি সুখী হতে পারেন। আপনার লক্...

Followers

Slide show

Advertise Here

Popular Posts